অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি
৭ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২২-০৫-২০২৫ ০৭:৫২:৩৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২২-০৫-২০২৫ ০৭:৫২:৩৪ অপরাহ্ন
সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ, মামলা প্রত্যাহারসহ ৭ দফা দাবিতে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন তারা।
বিদ্যুৎসেবা চালু রেখে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচিতে যোগ দেন পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্মসূচিতে ‘চুক্তি থেকে মুক্তি চাই, নিয়মিত চাকরি চাই’; ‘আরইবির দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা নিপাত যাক’; ‘চেয়ারম্যানের অপসারণ, শহর গ্রামে বিদ্যুৎবৈষম্য দূরীকরণ’সহ নানান স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, ''পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) মধ্যে বিদ্যমান সংকট নিরসনের মাধ্যমে আধুনিক ও টেকসই বিতরণ ব্যবস্থা বিনির্মাণ এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উন্নত ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আন্দোলন শুরু হয় দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। বর্তমান সরকার গত বছরের ২৩ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কারে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেন। কিন্তু দীর্ঘ সাত মাস অতিবাহিত হলেও আজ অবধি প্রতিবেদন দাখিল বা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।
এছাড়া মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ’ সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রীপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে সমিতির কর্মীদের উপর স্বৈরাচারি পন্থায় আরইবির জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্দোলনের অজুহাতে এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত, মামলা-গ্রেফতার-কারাবন্দি, অর্ধশতাধিক কর্মীকে বরখাস্ত, স্ট্যান্ড রিলিজপূর্বক সংযুক্ত এবং নিজ জেলা থেকে গড়ে ৪০০-৫০০ কি.মি দূরে শাস্তিমূলক বদলি করা হচ্ছে। এছাড়া স্মারকলিপির জন্য গণস্বাক্ষর কার্যক্রম করায় সাতজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গত চার মাসে সাড়ে চার হাজারের বেশি কর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে দেড় হাজারের অধিক লাইনক্রুকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে (নিয়োগপত্র অনুযায়ী চাকরি বদলিযোগ্য না) হয়রানিমূলক বদলি আদেশ জারি করা হয়েছে, বাদ যায়নি মৃত ব্যক্তি, গুরুতর অসুস্থ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত বিদ্যুৎ কর্মীও। চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন কয়েকজন নারী কর্মী। এছাড়া ফেসবুকে পোস্টের কারণেও পাঁচজনকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।''
তারা বলেন, ‘আমরা উল্লিখিত বিষয়ের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও যৌক্তিক সমাধানের জন্য অসংখ্যবার আরইবি চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একটিবার আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়নি। পবিসের যে সকল কর্মীকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে তাদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল, সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান অগ্রগতি, চুক্তিভিত্তিক বা অনিয়মিতদের নিয়মিতকরণ এবং আরইবির দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য গত ২১ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় দফায় গত ২৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
ওই বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি। গত অক্টোবর মাসেও প্রধান উপদেষ্টার তৎকালীন বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম প্রেস কনফারেন্সে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ঘোষণা সত্ত্বেও কোনো আলোচনা করা হয়নি।’
‘আমরা গত ১৬ মে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারের সহযোগিতা কামনা করলেও ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি। এমতাবস্থায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন পদের কর্মীদের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে ৭ দফা দাবিতে বুধবার (২১ মে) থেকে সারাদেশে বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করে আসছি’, বলেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা লোকমান হোসেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের প্রধান সমন্বয়ক মাজহারুল ইসলাম সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক নেতা, সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
৭ দফা দাবি–
১. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ফ্যাসিবাদি কায়দায় দমন-পীড়নের মাধ্যমে কর্মপরিবেশ অস্থিতিশীলকারী, অত্যাচারী আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ।
২. ‘এক ও অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি-পবিস একীভূতকরণ’ অথবা দেশের অন্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন।
৩. মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার, লাইন শ্রমিক এবং পৌষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিতকরণ।
৪. মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল।
৫. গ্রাহক সেবার স্বার্থে লাইনক্রুসহ সকল হয়রানি ও শাস্তিমূলক বদলি আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন।
৬. জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা বা শিফটিং ডিউটি বাস্তবায়নের জন্য অতিদ্রুত জনবলের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
৭. পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্র্বতীকালীন বোর্ড গঠন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহ্বান জানান, ‘দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ১৪ কোটি ভুক্তভোগী পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করণ এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার নির্যাতিত কর্মীর মুক্তির জন্য সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষকমন্ডলী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমকর্মীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিবিএ) সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী মনির হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মো. হাসানুজ্জামান, প্রচার সম্পাদক মো. মইনুল ইসলাম ও কার্যকরী সদস্য গোলাম মোস্তফাসহ অনেকে।
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স